আহসান হাবীব

আহসান হাবীব ( জন্ম: ২ জানুয়ারি , ১৯১৭ - মৃত্যু: ১০ জুলাই , ১৯৮৫ )   একজন খ্যাতিমান বাংলাদেশী কবি ও সাহিত্যিক । দীর্ঘ দিন দ... thumbnail 1 summary


আহসান হাবীব (জন্ম: ২ জানুয়ারি, ১৯১৭ - মৃত্যু: ১০ জুলাই, ১৯৮৫)  একজন খ্যাতিমান বাংলাদেশী কবি সাহিত্যিকদীর্ঘ দিন দৈনিক বাংলা পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক পদের দায়িত্ব পালন সূত্রে তিনি স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের সাহিত্য অঙ্গনে অভিভাবকের ভূমিকা রেখেছেন। তিনি পঞ্চাশ দশকের অন্যতম প্রধান আধুনিক কবি হিসেবে পরিগণিত।আহসান হাবীব ১৯৪৭ সালের ২১ জুন বিয়ে করেন বগুড়া শহরের কাটনারপাড়া নিবাসী মহসীন আলী মিয়ার কন্যা সুফিয়া খাতুনকে। আহসান হাবীব দুই কন্যা (কেয়া চৌধুরী জোহরা নাসরীন) ও দুই পুত্রের (মঈনুল আহসান সাবের মনজুরুল আহসান জাবের) জনক ছিলেন। পুত্র মঈনুল আহসান সাবের একজন স্বনামখ্যাত বাংলা ঔপন্যাসিক।







কবিতা

ধন্যবাদ
আসি তবে ধন্যবাদ
না না সে কি, প্রচুর খেয়েছি
আপ্যায়ন সমাদর যতটা পেয়েছি
ধারনাই ছিলো না আমার-
ধন্যবাদ।
রাত বেশী এইবার চলি তবে স্যার?
আসবো না?
কী বলেন!
হুজুরের সামান্য কেরানি-
দয়া করে ডেকেছেন
এ তো ভাগ্য বলে মানি।
খেটে খুটে?
সে কি কথা?
নিজের বাড়ির কাজ, আর
খাটবো না? চুপ করে খেয়ে যাবো স্যার?
চলি তবে। কী যে মজা,
সত্যি স্যার মজার ব্যাপার।
এমন মজার কথা এর আগে শুনি নাই আর!
চিঠি পরে ভেবেছি,
তাহলে
ডলি বুঝি আপনার মেয়েদের কারো ডাক নাম।
তাই তো সামান্য কিছু চকোলেটও কিনে আনলাম।
এসে দেখি-
তাই নাকি?
চকোলেটও খায় নাকি ডলি?
হতে পারে, সে যাকগে, সত্যি কথা বলি
ডলি নাম কুকুরছানার
আর তার জন্মোৎসব,
সত্যি এক ইউনিক ব্যাপার।
সত্যি নাকি,
ও দেশের ঘরে ঘরে ঘটে থাকে এটা?
তাহলেও বলুন তো এমন নিখুঁতভাবে সেটা
এ দেশে আপনি ছাড়া কে আর দেখালো?
অনেকেই?
হবেও বা, সে সব কি জানি?
আপনার অধীনস্থ জনৈক কেরানি-
দয়া করে ডেকেছেন বলে
তবেই না জানা গেলো, তেমন না হলে
এও তো আমার পক্ষে জানা
সম্ভব হতো না স্যার-
সত্যি স্যার কুকুরের ছানা,
তার জন্মদিনে এত খরচের হাত-
দুহাজার? তা হবে না?
ও ব্যাটার বাদশাহি বরাত!
হাসবো না?
সে কি স্যার, এমন খুশির দিন আর
আমাদের এ জীবনে বলুন তো আসে কতবার?
চোখে পানি?
না না স্যার, ও কিছু না,
কী জানেন? খেয়েছি এমন
শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
তা হলে এখন-
রাতও হলো আপনারও বিশ্রাম নেবার
সময় হয়েছে,
আজ আসি তবে স্যার!
জোনাকিরা
তারা একটি দু'টি তিনটি করে এলো
তখন- বৃষ্টি-ভেজা শীতের হাওয়া
বইছে এলোমেলো,
তারা- একটি দু'টি তিনটি করে এলো।

থই থই থই অন্ধকারে
ঝাউয়ের শাখা দোলে
সেই- অন্ধকারে শন শন শন
আওয়াজ শুধু তোলে।
ভয়েতে বুক চেপে
ঝাউয়ের শাখা , পাখির পাখা
উঠছে কেঁপে কেঁপে ।
তখন- একটি দু'টি তিনটি করে এসে
এক শো দু শো তিন শো করে
ঝাঁক বেঁধে যায় শেষে
তারা- বললে ও ভাই, ঝাউয়ের শাখা,
বললে ও ভাই পাখি,
অন্ধকারে ভয় পেয়েছো নাকি ?
যখন- বললে, তখন পাতার ফাঁকে
কী যেন চমকালো।
অবাক অবাক চোখের চাওয়ায়
একটুখানি আলো।
যখন- ছড়িয়ে গেলো ডালপালাতে
সবাই দলে দলে
তখন- ঝাউয়ের শাখায়- পাখির পাখায়
হীরে-মানিক জ্বলে।
যখন- হীরে-মানিক জ্বলে
তখন- থমকে দাঁড়াঁয় শীতের হাওয়া
চমকে গিয়ে বলে-
খুশি খুশি মুখটি নিয়ে
তোমরা এলে কারা?
তোমরা কি ভাই নীল আকাশের তারা ?

আলোর পাখি নাম জোনাকি
জাগি রাতের বেলা,
নিজকে জ্বেলে এই আমাদের
ভালোবাসার খেলা।
তারা নইকো- নইকো তারা
নই আকাশের চাঁদ
ছোট বুকে আছে শুধুই
ভালোবাসার সাধ।
রূপকথা
খেলাঘর পাতা আছে এই এখানে,
স্বপ্নের ঝিকিমিকি আঁকা যেখানে।
এখানে রাতের ছায়া ঘুমের নগর,
চোখের পাতায় ঘুম ঝরে ঝরঝর।
এইখানে খেলাঘর পাতা আমাদের,
আকাশের নীল রং ছাউনিতে এর।
পরীদের ডানা দিয়ে তৈরি দেয়াল,
প্রজাপতি রং মাখা জানালার জাল।
তারা ঝিকিমিকি পথ ঘুমের দেশের,
এইখানে খেলাঘর পাতা আমাদের।ছোট বোন পারুলের হাতে রেখে হাত,
সাতভাই চম্পার কেটে যায় রাত।
কখনও ঘোড়ায় চড়ে হাতে নিয়ে তীর,
ঘুরে আসি সেই দেশ চম্পাবতীর।
এই খানে আমাদের মানা কিছু নাই,
নিজেদের খুশি মত কাহিনী বানাই।
স্বদেশ
এই যে নদী
নদীর জোয়ার
নৌকা সারে সারে,
একলা বসে আপন মনে
বসে নদীর ধারে
এই ছবিটি চেনা।
মনের মধ্যে যখন খুশি
এই ছবিটি আঁকি
এক পাশে তার জারুল গাছে
দুটি হলুদ পাখি,এমনি পাওয়া এই ছবিটি
কড়িতে নয় কেনা।
মাঠের পরে মাঠ চলেছে
নেই যেন এর শেষ
নানা কাজের মানুষগুলো
আছে নানান বেশ,
মাঠের মানুষ যায় মাঠে আর
হাটের মানূষ হাটে,
দেখে দেখে একটি ছেলের
সারাটাদিন কাটে।
এই ছেলেটির মুখ
সারাদেশের সব ছেলেদের
মুখেতে টুকটুক।
কে তুমি ভাই,
প্রশ্ন করি যখন,
ভালবাসার শিল্পী আমি,
বলবে হেসে তখন।
এই যে ছবি এমনি আঁকা
ছবির মত দেশ,
দেশের মাটি দেশের মানুষ
নানান রকম বেশ,
বাড়ি বাগান পাখ-পাখালি
সব মিলে এক ছবি,
নেই তুলি নেই রং তবুও
আঁকতে পারি সবই।
ইচ্ছা
মনারে মনা কোথায় যাস?
বিলের ধারে কাটব ঘাস।
ঘাস কি হবে?
বেচব কাল,
চিকন সুতোর কিনব জাল।
জাল কি হবে?
নদীর বাঁকে
মাছ ধরব ঝাঁকে ঝাঁকে।
মাছ কি হবে?
বেচব হাটে,
কিনব শাড়ি পাটে পাটে।
বোনকে দেব পাটের শাড়ি,
মাকে দেব রঙ্গিন হাঁড়ি।


Banner