তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়

পরিচিতি : তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় ১৮৯৮   সালের   ২৪ জুলাই   পশ্চিমবঙ্গের   বীরভূম জেলার লাভপুর গ্রামে জমিদার পরিবারে জন্মগ্র... thumbnail 1 summary


পরিচিতি: তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় ১৮৯৮ সালের ২৪ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার লাভপুর গ্রামে জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা-মায়ের নাম হরিদাস বন্দ্যোপাধ্যায় প্রভাবতী দেবী।তারাশঙ্করের বাল্যজীবন কাটে গ্রামের পরিবেশেই।  লাভপুরের যাদবলাল হাই স্কুল থেকে ১৯১৬সালে এন্ট্রান্স(প্রবেশিকা) পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে ১৯১৫ সালে পাস করে প্রথমে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে এবং পরে সাউথ সুবার্বন কলেজে(এখনকার আশুতোষ কলেজ) ভর্তি হন। তিনি সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ইন্টারমিডিয়েট পড়ার সময় অসহযোগ আন্দোলন।অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দান। স্বাস্থ্যভঙ্গ এবং রাজনৈতিক কার্যকলাপের কারণে তাঁর পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রম সম্পূর্ণ করা সম্ভব হয়নি বিংশ শতাব্দীর একজন বিশিষ্ট বাঙ্গালী সাহিত্যিক ছিলেন তিনি ৬৫টি উপন্যাস, ৫৩টি গল্পের বই, ১২টি নাটক, ৪টি প্রবন্ধের বই, ৪টি আত্মজীবনী এবং ২টি ভ্রমণ কাহিনী লিখেছেন এই বিশিষ্ট জ্ঞানী মানুষটি রবীন্দ্র পুরস্কারসাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারজ্ঞানপীঠ পুরস্কার এবং পদ্মভূষণ পুরস্কারে পুরস্কৃত হন

ছোটগল্প

তাসের ঘর
অমর শখ করিয়া চায়ের বাসনের সেট কিনিয়াছিল। ছয়টা পিরিচ, পেয়ালা, চাদানি ইত্যাদি রঙ-চঙ করা সুদৃশ্য জিনিস, দামও নিতান্ত অল্প নয়- চার টাকা। চার টাকা মধ্যবিত্ত গৃহস্থের পক্ষে অনেক।
অমরের মায়ের হুকুম ছিল,সেটটি যত্ন করে তুলে রেখো বউমা, কুটুম্বসজ্জন এলে, ভদ্রলোকজন এলে বের করো।
কলিকাতা-প্রবাসী, হলেন্দ্রবাবুরা দেশে আসিয়াছেন, আজ তাঁহাদের বড়ির মেয়েরা অমরদের বাড়িতে বেড়াইতে আসিবেন; তাহারই উদ্যোগ-আয়োজনে বাড়িতে বেশ সমারোহ পড়িয়া গিয়াছে।
মা বলিলেন, চায়ের সেটটা আজ বের কর তো গৌরী।
গৌরী বাড়ির মেয়ে-অমরের অবিবাহিতা ভগ্নী। মা চাবির গোছাটা গৌরির হাতে দিলেন। গৌরী বাসনের ঘর খুলিয়া জার্মান-সিলভারের ট্রে-সমেত সেটটি বাহির করিয়া দিলেন। গৌরী বসলেন ঘর খুলিয়া জার্মান সিলভারের ট্রে-সমেত সেটটি বাহির করিয়া আনিয়া বলিল, পাঁচটা কাপ রয়েছে কেন-মা, আর একটা কাপ কি হল? এই দেখ বাবু, সবে এই আমি বের করে আনচি, আমার দোষ দিও না যেন।
বিরক্ত হইয়া মা বলিলেন, দেখ না ভালো করে খুঁজে, ঘরের কোথাও আছে। পাখা হয়ে উরে তো যাবে না।
গৌরী সেটটা সেইখানে নামাইয়া আবার ভালো করিয়া ঘর খুঁজিয়া আসিয়া বলিল, পাখাই হল, না কেউ খেয়েই ফেলল-সে আমি জানি না বাপু, তবে ঘরের মধ্যে কোথাও নেই।
দুমদাম করিয়া মা ঘরে প্রবেশ করিতে করিতে বলিলেন, তোমরি দোষ কি মা, আমার কপালের দোষ। তোমরা চোখ কপালের ওপর তুলে কাজ কর, নীচের জিনিস দেখতে পাও না।
গৌরীর চোখ হয়ত কপালের, উপরেই উঠিয়া থাকে, কিন্তু এ ক্ষেত্রে গৌরীর অপরাধ প্রমাণিত হইল না। পেয়ালাটা খুঁজিয়া পাওয়া গেল না।
মা হাঁকিলেন, বউমা, বউমা!
বউমা-অমরের স্ত্রী শৈল-উপরে তখন ঘর-দুয়ার ঝাড়িয়া পরিষ্কার করিয়া অতিথিদের বসিবার স্থান করিতেছিল, সে নীচে আসিয়া শাশুড়ির কাছে দাঁড়াইয়া বলিল, আমায় ডাকলেন?
শাশুড়ি বাসন-অন্ত-প্রান, সিন্দুকের চাবি পুত্রদের দিয়া বাসনের ঘরের চাবি লইয়াই বাঁচিয়া আছেন। পেয়ালাটার খোঁজ না পাইয়া ফুটন্ত তৈলে নিক্ষিপ্ত বার্তাকুর মত সশব্দে জ্বলিতেছিলেন, তিনি বলিলেন, হ্যাঁ গো রাজার কন্যে, নইলে বউমা বলে ডাকা কি ওই বউড়িদের, না ডোমেদের?
শৈল নীরবেই দাঁড়াইয়া রহিল, উত্তর করা তার অভ্যাস নয়।
শাশুড়ি বলিলেন, একটা পেয়ালা পাওয়া যাচ্ছে না কেন, কি হল?
একটু নীরব থাকিয়া বধূ বলিল, ও আমিই ভেঙে ফেলেছি মা।
শাশুড়ি কিছুক্ষণ বধূর মুখের দিকে চাহিয়া থাকিয়া বলিলেন, বেশ করেছ মা, কি আর বলব বল!
সত্য কথা, এমন অকপটভাবে অপরাধ স্বীকার করিলে অপরাধীকে মার্জনা করা ছাড়া আর উপায় থাকে না। সশব্দে দরজাটা বন্ধ করিয়া দিয়া শাশুড়ি বলিলেন, পাঁচটাকেও ফেলে দেব আমি চুরমার করে ভেঙে।
রাগ গিয়া পড়িল চায়ের সেটটার উপর।
শৈল সবই নীরবে সহ্য করে, সে নীরবেই দাঁড়াইয়া রহিল। শাশুড়ি বলিলেন, ভেঙেছ বলা হল, বেশ হল, আবার চুপ করে দাড়িয়ে রইলে কেন? যাও, ওপরের কাজ সেরে এস, জলখাবারগুলো করতে হবে।
শৈল উপরে চলিয়া গেলে, কিছুক্ষণ পরে হাসিমুখে আসিয়া রান্নাঘরে শাশুড়ির কাছে দাঁড়াইল।
শাশুড়ির মনের উত্তাপ কমিয়া আসিয়াছিল, বলিলেন, নাও তোমাদের দেশের মত খাবার তৈরি কর।
শৈল খাবারের সাজ-সরঞ্জাম টানিয়া লইয়া বসিয়া বলিল, সমস্তর ভেতরই মাচে পুর দোব তো মা?
-
অ্যাঁ, মাছের পুর? হ্যাঁ, তা দেবে বইকি, বিধবা তো কেউ আসছে না।
ময়দার ঠোলার ভিতরে মাচের পুর দিতে দিতে শৈল বলিল, জানেন না, এর সঙ্গে যদি একটুখানি হিঙ দেওয়া হত-ভারি চমৎকার হত। বাবার আামর হিঙ ভিন্ন কোনও জিনিস ভালো লাগে না। আর যে-সে হিঙ আমাদের বাড়িতে ঢুকতে দেন না; আফগানিস্তান থেকে কাবুলী সব আসে, তারাই দিয়ে যায়।
শাশুড়ি বললেন, পশ্চিম ভালো যায়গা মা, আমাদের পাড়াগাঁয়ের সঙ্গে কি তুলনা হয়, ননা সেব জিনিস পাওয়া যায়?
শৈল বলিল, পশ্চিমেও সে হিঙ পাওয়া যায় না। কাবুলীরা সে সব নিজেদের জন্য আনে, শুধু বাাকে খুব খাতির করে কিনা, টাকাকড়ি অনেক সময় নেয়-তাই সে জিনিস দেয়। শুধু কি হিঙ, যখন আসবে তখন প্রত্যেক আঙুর, বেদানা, নাশপাতি, বাদাম, হিঙ-এ সব ছোট ছোট ঝুড়ির এক এক ঝুড়ি দিয়ে যায়। পাঁচজনের মিলে সে হয় কত! কাঁচা জিনিস অনেক পচেই যায়।
ও-ঘরের বারান্দা হইতে ননদ গৌরী মৃদুস্বরে বলিল, এই আরম্ভ হল এইবার। অর্থাৎ বাপের বাড়ির গল্প আরম্ভ হইল। সত্য কথা, শৈলর ওই এক দোষ; বিনীত, নম্র, মিষ্টিমুখী, সুন্দরী বউটি প্রত্যেক কথায় তাহার বাপের বাড়ির তুলনা না দিয়া থাকিবে না।
পাশের বাড়ির তুমূল কোলাহল উঠিতেছিল, শাশুড়ি এবং বধূতে কলহ বাধিয়াছে।
শৈলর শাশুড়ি বলিলেন, যা হবে, তাই হোক মা। আমার বউ ভালো হয়েছে, উত্তর করতে জানে না; দোষ করলে বকব কি, মুখের দিকে চাইলে মায়া হয়।
শৈল বলিল, ওঁর ছেলে স্ত্রীকে শাসন করেন না কেন? জানেন, মা আমার দাদা হলে আর রক্ষে থাকত না। সঙ্গে সঙ্গে বউকে হয়ত বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিতেন। একবার বউদি কি উত্তর করেছিলেন মায়ের সঙ্গে, দাদা তিন মাস বউদির সঙ্গে কথা কননি। শেষে মা আবার বলে কয়ে কথা বলান। তবে দাদার আমার বড্ড বাতিক-খদ্দর পরবে হাঁটু পর্যন্ত, জামা সেই হাত-কাটা-এতটুকু। তামাক নয়, বিড়ি না, সিগারেট না,- সে এক বাতিকের মানুষ!
শাশুড়ি বোধ হয় মনে মনে একটু বিরক্ত হইয়া উঠিলেন, বলিণে; নাও নাও, তাড়াতাড়ি হাত চালিয়ে নাও। দেখো, যেন মাছের কাঁটা না থাকে।
শৈল বলিল, ছোট মাছ- কাঁটা বাছতেই হাত চলছে না মা; তবে এই হয়ে গেল। কড়ায় এক ঝাঁক ঙিাড়া ছাড়িয়া দিয়া, সে আবার বলিল, মা আমার কক্ষনো ছোট মাছ বাড়িতে ঢুকতে দেব না। দু সেরের কম মাছ হলেই, সঙ্গে সঙ্গে ফেরত দেবেন। কুচো মাছের মধ্যে ময়া, আর কাঠ-মাছের মধ্যে মাগুর।
শাশুড়ি বাধা দিয়া বলিলেন, নাও নাও, সেরে নিয়ে চুল-টুল বেঁধে ফেল গে।
কেশপ্রসাধন-অন্তে কাপড় ছাড়িতেছিল।
ননদ গৌরী প্রশংসমমান দৃষ্টিতে ভ্রাতৃজায়ার দিকে চাহিয়া বলিল-উঃ, রঙ বটে তোমার বউদি! তুমি যা পড়বে, তাতেই তোমাকে সুন্দর লাগবে, আম আমাদে দেখ না, যেন কাঠ পুড়িয়ে-
শৈল বলিল, এ যে দেবার নয় ভাই, নইলে তোমাকেও দিতাম। আমার আর কি রঙ দেখছ! বাবার মা দাদার আমার অন্য বোনদের যদি দেখতে, তবে দেখতে রঙ কাকে বলে; ঠিক একেবারে গোলাপফুল।
গৌরী বিস্মিত হইয়া বলিল, বল কি বউদি, তোমার চেয়েও ফরসা রঙ?
-
হ্যাঁ ভাই, বাড়ির মধ্যে আমিই কালো।
শাশুড়ি আসিয়া চাপা গলায় বলিলেন, আর কত দেরি বউমা, ওরা যে সব এসে গেছেন।
শৈল তাড়াতাড়ি মাথার কাপড়টা টানিয়া দিয়া বলিল, এই যে মা, হয়ে গেছে আমার।
ধনী কলিকতা-প্রবাসিনীদের মহার্ঘ উজ্জ্বল সজ্জা ভূষণ রূপ সমস্তকে লজ্জা দিয়া মৈল আর্বিভূতা হইল- নক্ষত্রমণ্ডলে চন্দ্রকলার মত।
প্রবাসিনীর দল মুগ্ধ হইয়া দেখিতেছিল, শৈল হাসিমুখে প্রণাম করিল।
ও-বাড়ির গিন্নী বলিলেন, এ যে চাঁদের মত বউ হয়েছে তোমার দিদি। লেখাপড়া-টড়াও জানে নাকি?
শৈল মৃদুস্বরে বলিল, স্কুলে তো পড়ি নি, বাবা স্কুলের শিক্ষা বড় পছন্দ করেন না। বাড়িতে ড়েছি, ম্যাস্ট্রিক স্ট্যান্ডার্ড শেষ হয়েছিল, তারপরই-
কথা অসমাপ্ত থাকিলেও ইঙ্গিতে সমাপ্ত হইয়া গেল।
ও-বাড়ির গিন্নী বলিলেন, কে জানে মা, আজকাল কি যে হাল হল দেশের, মেয়েদের আর কলেজে না পড়লে বিয়ে হচ্ছে না। আমার বউমা তো কলেজে পড়ছিল; বিয়েল পর আমি সব ছাড়িয়ে দিলাম।
শৈল উত্তর দিল, কলেজের কোর্স আমিও কিছু পড়েছি। আমার বোনেরা সব ভালো করে পড়ছে; বাড়িতে দাদাই পড়ান, পড়াশোনায় দাদার ভয়ানক বাতিক কিনা, জানেন-বছরে পাঁচ-সাতশ টাকার বই কেনেন, বাঙলা, ইংরিজী! বিলেত থেকে ইংরিজী বই আনাবেন। কামকর্ম যদি করতে বলবেন মা,- কাজকর্ম অবিশ্যি বাবারই বিজনেস আছে-সেই বিজনেস দেখতে বলেন তো বলবেন, সম্মুখে জ্ঞানসমুদ্র মা, চোখ ফেরাবার আমার অবকাশ নেই।
-
কোথায় তোমার বাপের বাড়ি?
-
এলাহাবাদ। এলাহাবাদ গেছেন নিশ্চয়ই, আমাদের সেখানে তিন পুরুষ বাস হয়ে গেল। বাবা সেখানে কন্ট্রাক্টরি করেন।
-
কি রকম পান-টান?
-
আমি তো ঠিক জানি না। তবে মেজভাই বলেন মাঝে মাঝে, এরকম করে আর চলবে না মা, তুমি বাবাকে বল। পাকা বাড়িগুলো ভাড়া দিয়ে নিজে সেই খোলার বাড়িতে থাকবেন, টাঙায় চড়ে কাজ দেখে বেড়াবেন, মোটর কিনবেন না, এ করে চলবে না। বাবা বলেন, আমার পৈতৃক বাড়ি, যেমন আছে তেমনই থাকবে, ভাঙবও না, অন্য কোথাও যাবও না। আর গাড়ি, গাড়িও আমি কিনব না, ছেলেরা বিলাসী হবে। আমি রোজগার করছি, তারা যদি না পারে! লোকে বলে-মহেন্দ্রবাবু এক হিসাবে সন্ন্যাসী!
শৈল কথা শেষ করিয়া মৃদু মৃদু হাসি হাসে।
প্রবাসিনী গিন্নী একবার শৈলর শাশুড়িকে বলিলেন, তাহলে ছেলের তোমার বেশ বড় ঘরেই বিয়ে হয়েছে দিদি। তোমাদের চেয়ে অনেক বড় ঘর। তত্ত্ব-তল্লাস করেন কেমন বেয়াইরা?
বিচিত্র সংসার, বিচিত্র মানুসেল মন, কোন কথায় কে যে আঘাত পায়, সে বোঝা বোধকরি, বিধাতারও সাধ্য নয়। তোমাদেরে চয়ে বড় ঘর’- এই কথাটুকুতেই অমরের মা আহত হইয়া উঠিলেন, তিনি মুখ বাঁকাইয়া বলিলেন, কে জানে দিদি, বড় না ছোট, সে জানি না। তবে বউমাই বলেন, বাপেদের এই, বাপেদের ওই; কিন্তু তত্ত্ব-তল্লাসও দেভি না, আজ দুবছর ওই দুধের মেয়ে এসেছে, নিয়ে যাওয়ার নাম পর্যন্ত নেই।
শৈল মুহূর্তে বলিয়া উঠিল, জানেন তো মা, বাবার আমার অদ্ভুত ধরন! তিনি বলেন, যে বস্তু আমি দান করলাম, সে আবার আমি কেন আমার ঘরে আনব। তবে যাকে দার করলাম সে যদি স্বেচ্ছায় নিয়ে আসে, তখন তাদের আদর করব, সম্মান করব, আমার বলব। আর তত্ত্ব-তল্লাস এত দূর থেকে করা সম্ভব হয়ে উঠে না; কিন্তু টাকা তো চাইলেই দে;ন তিনি, যখন চাইবেন, তখনই দেবেন।
শাশুড়ি বলিয়া উঠিলেন, কি বললে বউমা, তোমার বাবা আমাদের টাকা দেন-কখন, কোন কালে?
শৈল বলিল, আপনাদের কথা তো বলি নি মা; আপনি জিজ্ঞাসা করে দেখবেন- একশ, পঞ্চাশ, আশি-চাইলেই তিনি দেন, কেন দেবেন না?
শাশুড়ির মুখ কালো হইয়া উঠিল। শুধু গ্রামবাসী নয়, উপস্থিত মহিলাবৃন্দ প্রবাসিনী-দেশ-দেশান্তর এ সংবাদ রটিয়া যাইবে। অমরের মায়ের মাথা যেন কাটা গেল।
তিনি বলিলেন, ভালো, অমর আসুক, আমি জিজ্ঞাসা করব। কই ঘুণাক্ষরেও তো আমি জানি না।
ও-বাড়ির গিন্নী বলিলেন, তোমায় হতয় বলে নি অমর। দরকার হয়েছে শ্বশুরের কাছে নিয়েছে।
অমরের মা বলিলেন, সে নেবে কেন ভাই? সে নেওয়া যে তার অন্যায়-নীচ কাজ। ছিঃ শ্বশুরের কাছে হাত পাতা, ছিঃ।
অমর কাজ করে কলিকাতায়, সেখানে সে অর্ডার সাপ্লাইয়ের ব্যবসা করিয়া থাকে। ব্যবসা হইলেও ক্ষুদ্র তাহার আয়তন, সঙ্কীর্ণ তাহার পরিধি, তবুও সে স্বাধীন; তাই মাসে দুইবার করিয়া সে বাড়ি আসিয়া থাকে। অমরের মা রোষকষায়িত নেত্রে পুত্রের আগমনপথের দিকে চাহিয়া রহিলেন।
ধনী কলিকাতা-প্রবাসিনীদের সম্মুখে যে অপমান তাঁহার হইয়াছে, সে তিনি কিছুতেই ভুলিতে পারিতেছেন না। শুধু তাঁহার সংসারের অসচ্ছলতাই নগ্নভাবে আত্মপ্রকাশ করে নাই, তাঁহাকে মিথ্যাবাদিনী সাজিতে হইয়াছে। এ কয়দিন বধূর সঙ্গেও একরূপ বাক্যালাপও করেন নাই। শৈল অবশ্য সে বিষয়ে দোষী নয়, সে সদাসর্বদাই মুখে হাসিটি মাখিয়া শাশুড়ির আজ্ঞার জন্য তাঁহার মুখের দিকে চাহিয়া থাকে।
সংসারের নিয়ম- কাল অগ্নির উত্তাপও হরিয়া থাকে, মনের আগুনও নিবিয়া আসে। কিন্তু শৈলর দুর্ভাগ্য, শাশুড়ির মনের আগুন-শিখা হ্রস্ব হইতে না হইতে ইন্ধনের প্রয়োগে দ্বিগুণ হইয়া উঠিল। পাড়ায় ঘরে ঘাটে এই লইয়া যে কানাকানি চলিতেছিল, সেটা ভালোভাবেই ক্রমশ জানাজানি হইয়া গেল।
সেদিন সরকারদের মজলিসে একদফা প্রকাশ্য আলোচনার সংবাদ অমরের মা স্ককর্ণেই শুনিয়া আসিলেন।
দিন দশেক পরেই কিসের একটা ছুটি উপলক্ষ্যে অমর বাড়ি আসিবার কথা জানাইয়া দিল। শৈলর মাথায় যেন আকাশ ভাঙিয়া পড়িল। কথাট মিথ্যা, বারবার সঙ্কল্প করিয়াও সে এ বিষয়ে স্বামীকে কোনও কথা লিখিতে পারে নাই-কোনও অনুরোধ জানাইতে কেমন যেম লজ্জা বোধ হইয়াছে। তাহার হাত চলে নাইম টোঁট কাঁপিয়াছে, চোখে জলও দেখা দিয়াছে, সে চিঠির কাগজখানা জড়ো করিয়া মুড়িয়া ছুঁড়িয়া ফেলিয়া দিয়াছে। শৈল আপনার শয়নকক্ষে স্তব্ধ প্রতীক্ষায় স্বামীর জন্য বসিয়া রহিল, অমর আসিলেই সে তাহার পায়ে আছাড় খাইয়া পড়িবে।
অকস্মাৎ অমরে উচ্চ ক্রুব্ধ কণ্ঠস্বরে সে চমকিয়া উঠিল। অন্ধকারের আবরণের মধ্যে চোরের মত নিঃশব্দে বাহিরে আসিয়া সে আশ্বস্ত হইল। ক্রোধের প্রসঙ্গ তাহাকে লইয়া নয়, অমর বচসা জুড়িয়া দিয়াছে কুলীর সহিত।
-
এই আধ মাইল-মালের ওজন আধ মণ পঁচিশ সের, তোকে দু আনা দিলাম
-
আবার কত দেব?
লোকটাও ছাড়িবার পাত্র নয়। সে বলিতেছিল, তখন আপনি চুকিয়ে নেন নাই কেন মশায়? তখন যে একেবারে হুকুম ঝাড়ালেন-এই, ইধার আও। আমাদের রেট তিন আনা করে- দ্যান, দিতে হবে।
-
নিকালো বেটা হারামজাদা, নিকালো বলছি-এই নে পয়সা, কিন্তু এখুনি নিকালো সামনে বলছি।
পয়সা ফেলিয়া দিয়া অমর ক্রুব্ধ পদক্ষেপে বাড়ি ঢুকিল।
-
দেখ না, লোকসান যেদিন হয়, সেদিন এমনি করেই হয়। পঞ্চাশটা টাকা একজন মেরে দিয়ে পালাল, তারপর ট্রেন ফেল, আবার বাড়ি এসে চারটে পয়সা লোকসা।
মাও বোধকরি প্রস্তুত হইয়া দাঁড়াইয়া ছিলেন, তিনি শান্ত অথচ শ্লেষতীক্ষ্ম কণ্ঠে কহিলেন, তার জন্যে তোমার চিন্তা কি বাবা? বড়লোক শ্বশুর রয়েছেন, তাকে লেখ, তিনিই পাঠিয়ে দেবেন।
অর্থ না বুঝলেও শ্লেষতীক্ষ্ম বাক্যশর আঘাত করিতে ছাড়ে নাই। অমর ভ্রূকুঞ্চিত করিয়া বলিল, তার মানে?
মা, বলিলেন, সেই জন্যই তো তোমার পথ চেয়ে দাঁড়িয়ে আছি বাবা। আমি শুনব- তুমি আমাকে তোমার রোজগারের অন্ন খাওয়াও, না তোমার শ্বশুরের দানের অন্নে আমাকে পিণ্ডি দাও? তুমি নাকি তোমার শ্বশুরের কাছ থেকে টাকা চাও, আর শ্বশুর তোমায় টাকা পাঠিয়ে দেন-একশ, পঞ্চাশ, আশি, যখন যেমন তোমার দরকার হয়?
ক্লান্ত তিক্তচিত্ত অমরের মস্তিষ্কে মুহূর্তে আগুন জ্বলিয়া উঠিল। সে বলিয়া উঠিল, কে, কোন হারামজাদা, জারামজাদী সে কথা বলে?
মা ডাকিলেন, বউমা।
শৈলর চক্ষের সম্মুখে চারিদিকে যেন দুলিতেছে--কি করিবে, কি বলিবে, কোনও নির্ধারণই সে স্থির করিতে পারিল না।
শাশুড়ি আবার বলিলেন, চু করে রইলে কেন, বল উত্তর দাও?
শৈল বিহ্বলের মত বলিয়া ফেলিল, হ্যাঁ, বাবা দেন তোন।
অমর মুহূর্তে উন্মত্তের মত দেওয়ালে মাথা কুটিতে আরম্ভ করিল।
মা তাড়াতাড়ি তাহাকে ধরিয়া ফেলিলেন।
অমর বলিল, ও বাড়িতে থাকলে আমি জলগ্রহণ করব না।
মা বলিলেন, আমার মাথা কাটা গেল- হরেনবাবুর বাড়ির মেয়েদের কাছে। এমন বউ নিয়ে আমিও ঘর করতে পারব না বাবা।
বিচারক যেখানে বিধিবদ্ধ নিধানের মধ্যে আবদ্ধ নয়, সেখানে বিচার হয় না, বিচারের নামে ঘটে, স্বেচ্ছাচার। তাই ওইটুকু অপরাধে শৈলর অদৃষ্টে গুরু দণ্ড হইয়া গেল,- সেই রাত্রেই তাহার বির্নাসনের ব্যবস্থা হইল। রাত্রি বারোটার ট্রেনে শৈলর দেবর তাহাকে লইয়া এলাহাবাদ রওনা হইয়া গেল।
শৈলকে দেখিয়াই তাহার মা আনন্দে বিস্ময়ে আকুল হইয়া বলিলেন, এ কি শৈল, তুই যে এমন হঠাৎ?
শৈল ঢোঁক গিলিয়া বলিল, কেন মা আমাকে কি আসতে নেই? তোমরা তো আনলে না, কাজেই নিজেই এলাম।
মেয়েকে বুকে জড়াইয়া ধরিয়া মা বলিলেন, ওরে, আনতে কি অসাধ, না আমার মনেই ব্যথা হয় না, কিন্তু কি করব বল?
একটি দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া আবার বলিলেন, বাবুর রোজগার কমে গেছে, বাজার নাকি বড় মন্দা। তার ওপর হৈমির বিয়ে এসেছে-খরচ যে করতে পারছি না। মা।
শৈল অবকাশ পাইয়া অঝোরঝরে কাঁদিয়া বুক ভাসাইয়া দিল।
মা বলিলেন, সঙ্গে কে এসেছে শৈলী? জামাই?
শৈল বিবর্ণ মুখে বলিল, না, আমার দেওর এসেছে।
-
কই সে-ওমা, বাইরে কেন সে?-ঘরের ছেলে। ওরে দাই, দেখ তো, বড়দিদির দেওর বাইরে আছেন, ডাক তো। বল-মা ডাকছেন।
শৈলর বুক দুরদুর করিতেছিল। কনিষ্ঠ ভ্রাতার প্রতি অমরের আদেশ ছিল, সে যেন সেখানে জনগ্রহণ না করে। কঠিন শপথ দিয়া আদেশ দিয়াছে অমর।
দাই ফিরিয়া আসিয়া বলিল, কই কেউ তো নেই!
মা আশ্চর্য হইয়া বলিলেন, সে কি? কোথায় গেল সে?
শৈল বলিল, তাকে ট্রেন ধরতে হবে মা, সে চলে গেছে।
বিস্ময়ের উপর বিস্ময়ে মা যেন অভিভূত হইয়া গেলেন।-ট্রেন ধরতে হবে-চলে গেছে, সে কি?
শৈল বলিল, তাকে সিমলে যেতে হবে মা-একটা খুব বড় কাজের সন্ধান করতে যাচ্ছে; যে ট্রেনে আমরা নামলাম, ট্রেনই সে গিয়ে ধরবে, থাকবার তার উপায় নেই।
মা আশ্বস্ত হইয়া বলিলেন, ফেরবার সময় নামতে বলে দিয়েছিস তো?
একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া শৈল বলিল, বলে তো দিয়েছি মা, কিন্ততু নামতে বোধহয় পারবে না, খুব জরুরি কাজ কিনা। সিমলে থেকে কলকাতায় যাবে একটা কার চিঠি নিয়ে, সময়ে পৌঁছুতে না পারলে তো সব মিছে হবে।
এই সময়েই শৈলর জ্ঞানান্বেষী বড়দাদা বাড়ি ঢুকিল। পরনে তাহার খদ্দর সত্য, কিন্তু জরিপাড় শৌখিন খদ্দরের ধুতি, গায়েও শৌখিন পাঞ্জাবি, মুখে একটা গোল্ডফ্রেক সিগারেট, হাতে কতকগুলি মাছ ধরিবার চারের উপকরণ।
শৈলকে দেখিয়াই সে বলিল, আরে, শৈলী কখন, অ্যাঁ?
হাসিমুখে শৈল বলিল, এই তো দাদা। ভালো আছেন আপনি।
০হ্যাঁ। তা বেশ, কই, তুই নতুন লোক, খাস বাঙলা দেশের মানুষ-কই, দে তো জারড়লো তৈরি করে, দেখি, তোর হাতের কেমন পয়! মাছ ধরতে যাব আজ দেহাতে
-
এক জমিদারের তালাওয়ে।
শৈল উপকরণগুলি হাতে লইয়া বলিল, চলুন না দাদাম একবার আমাদের ওখানে. কত মাছ ধরতে পারেন একবার দেখব।
-
তোদের ওখানে পুকুরে খুব মাঝ, না-রে?
-
আমাদেরই পুকুরে খুব বড় বড় মাছ-আধ মণ, পনেরো সের, পঁচিশ সের এক-একটা মাছ। জানেন দাদা, তখন প্রথম গেছি, একটা আঠারো সের কাতলা মাছ এনে দেওর বললে, বউদিকে কুটতে হবে। ওরে বাপ রে, সে যা আমার ভয়! এখন আর আমার ভয় হয় না- আধ মণ, পঁচিশ সের মাছ দিব্যি কেটে ফেলি।
-
যাবার ইচ্ছে তো হয় রে, হয়ে ওঠে না। কলকাতা যাই, তাও অমরবাবুর সঙ্গে দেখা করতে সময় হয় না। আবার তুই অবিশ্যি যদি কলকাতায় থাকতিস, তবে নিশ্চয় যেতাম।
শৈল বলিল, আচ্ছা, দেখব, আমাদেরও কলিকাতায় বাড়ি হবে এইবার-
অর্ধপথে বাধা দিয়া দাদা বলিল, কলকাতায় তোদের বাড়ি হচ্ছে নাকি?
শৈল বলিল, জায়গা কিনেছেন। ধীরে ধীরে হবে এইবার।
মা পুলকিত হইয়া প্রশ্ন করেন, জামাই এখন বেশ পাচ্ছেন, না রে শৈলী?
শৈল নত মুখ করিয়া বলিল, দেশেও দালান করবেন।
মাস দুয়েক পরই কিন্তু শৈলর মা অনুভব করিলেন, কোথায় একটা অস্বাভাবিক কিছু ঘটিয়াছে, জামাই বা বেয়ান কেহই তো শৈলকে পত্র দেন না, সংবাদ লন না। তিনি স্বামীকে বলিলেন, দেভ, তুমি বেয়ানকে একখানা পত্র লেখ।
মহেন্দ্রবাবু নিরীহ ব্যক্তি। শৈল অন্যের সম্বন্ধে যথই অত্যুক্তি কলিয়া থাক, তাহার পিতার উপার্জনকে যতই বাড়াইয়া বলিয়া থাক, পিতার প্রকৃতি সম্বন্ধে সে অত্যুক্তি করে নাই। সত্যই তিনি সাধু প্রকৃতির নিরীহ ব্যক্তি।
মহেন্দ্র বাবু স্ত্রীর কথায় শঙ্কিত হইয়া পরদিনই বেয়ানকে পত্র দিলেন। লিখলেন- আমি আপনার অনুগৃহীত ব্যক্তি, শৈলকে চরণে স্থান দিয়া আপনি আমার প্রতি অশেষ অনুগ্রহ প্রকাশ করিয়াছেন। আশা করি- প্রার্থনা করি, সে অনুগ্রহ আমি বা আমার শৈল যেন বঞ্চিত না হই। আমি বুঝিতে পারিতেছি না, সেখানে কি ঘটিয়াছে, শৈল কি অপরাধ করিয়াছে! কিন্তু অপরাধ যে করিয়াছে তাহাতে সন্দেহ নাই। সে কোন কথা প্রকাশ করে নাই; তবুও এই দীর্ঘ দুই মাসের মধ্যে কই কোন আশীর্বাদ তো আসিল না ! শীমান অমর বাবাজীবনও তো কোন পত্র দেন না! দয়া করিয়া কি ঘটিয়াছে, আমাকে জানাইবেন; আমি নিজে শৈলকে আপনার চরণে উপস্থিত করিয়া তাহার শাস্তি দিব
তারপর শেষে আবার লিখিলেন- অমর সংবাদ না দিলেও শৈলর নিকট তাহার উন্নতির কথা শুনিয়া বড়ই সুখি হইলাম। কলিকাতায় বাড়ি করিবে শুনিয়া পরম আনন্দ হইল। আপনার মেজ ছেলের পরীক্ষার সংবাদ শুনিলাম, কয়েক নম্বরের জন্য প্রথম হইতে পারে নাই। আশীর্বাদ করি বি.এ-তে সে যোগ্য স্থান লাভ করিবে।
পত্রখানা পড়িয়া অমরের মায়ের চোখে চক্ষে জল আসিল ।
মনে তাহার ক্রোধবহ্নি জ্বলিতেছিল, ইন্ধনের অভাবে সময়ক্ষেপে সে বহ্নি নিভিয়া গিয়াছে। প্রতি পদে তাহার শৈলর প্রতিমার মত মুখ মনে পড়িত। বলুক সে মিথ্যা, তবু মিষ্ট কথার সুরটি তাঁহার কানে বাজিত। আজ বেয়াইয়ের পত্র পড়িয়া তাঁহার সকল গ্লানি নিঃশেষে বিদূরিত হইয়া গেল। শুধু বিদূরিত হইয়া গেল না, পুত্রবধূর উপর তাঁহার মন প্রসন্ন হইয়া উঠিল, পত্রের শেষভাগটুকু পড়িয়া আবার তিনি সেখানটা পড়িলেন- কলিকাতায় বাড়ি ইত্যাদি।
তিনি অমরকে পত্র দিলেন। বেয়াইকে লিখিলেন- বউমা আমার ঘরের লক্ষ্মী, লক্ষ্মীর কোন অপরাধ হয়? তবে কার্যগতিকে সংবাদ লইতে পারি নাই, সে দোষ আমারই। শীঘ্রই অমর বউমাকে আনিবার জন্য যাইবে।
পত্র পাইবা মাত্র শৈল পুলকিত হইয়া স্বামীকে পত্র লিখিতে বসিল।
অমর আসিয়াছে। দশ-বারো সেরের একটা মাছ সে আনিয়াছে। সে তাড়াতাড়ি সেটা কাটিতে বসিল।
বলিল, বড় জাতের মাছ বোধ হয় ধরা পড়ে নি। এগুলো মাঝলাজাত।
ওদিক হইতে ভ্রাতৃজায়া বলিল, এই আরম্ভ হল। শ্বশুরবাড়ির অবস্থা ভাল আর কারও হয় না!
রাত্রে অমরের নিকট শৈল নতমুখে দাঁড়াইয়া ছিল। অমর একখানা পত্র বাহির করিয়া দেখাইয়া বলিল, এসব কি বল তো? -‘একটি বড় মাছ যেমন করিয়া হোক আনিবে, এখানে আমি আমাদের অনেক মাছ আছে বলিয়াছি।বেশ, আমাদের ষোল-আনা একটাও তো পুকুর নেই, অথচ- ছিঃ! আর, ‘এখানে মুক্তার গহনার চাল হইয়াছে, আমার জন্য ঝুটা মুক্তার মালা একছড়া’ -ও কি-ও কি, কাঁদছ কেন, শৈল, শৈল?
শৈল বিছানায় মুখ গুঁজিয়া আকুল হইয়া কাঁদিয়া উপাধান সিক্ত করিয়া তুলিল। সে কথা সে অমরকে মুখ ফুটিয়া বলিবার নয়!


আরও পড়তে-
রূপসী বিহঙ্গিনী- https://app.box.com/shared/7ui60aqj9h

Banner