সুকুমার রায়

সুকুমার রায় (১৮৮৭ - ১৯২৩) (ইংরেজি ভাষা: Sukumar Roy) একজন বাঙালি শিশুসাহিত্যিক ও ভারতীয় সাহিত্যে "ননসেন্স্ রাইমের" প্রব... thumbnail 1 summary


সুকুমার রায় (১৮৮৭ - ১৯২৩) (ইংরেজি ভাষা: Sukumar Roy) একজন বাঙালি শিশুসাহিত্যিক ও ভারতীয় সাহিত্যে "ননসেন্স্ রাইমের" প্রবর্তক। তিনি একাধারে লেখক, ছড়াকার, শিশুসাহিত্যিক, রম্যরচনাকার ও নাট্যকার। তিনি ছিলেন জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর সন্তান এবং তাঁর পুত্র খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়। তাঁর লেখা কবিতার বই আবোল তাবোল, গল্প হযবরল, গল্প সংকলন পাগলা দাশু, এবং নাটক চলচ্চিত্তচঞ্চরী বিশ্বসাহিত্যে সর্বযুগের সেরা "ননসেন্স" ধরণের ব্যঙ্গাত্মক শিশুসাহিত্যের অন্যতম বলে মনে করা হয়, কেবল অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড (Alice in Wonderland) ইত্যাদি কয়েকটি মুষ্টিমেয় ক্লাসিক-ই যাদের সমকক্ষ। মৃত্যুর আশি বছর পরও তিনি বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয়তম শিশুসাহিত্যিকদের একজন।


অসিলক্ষণ পণ্ডিত

রাজার সভায় মোটা মোটা মাইনেওয়ালা অনেকগুলি কর্মচারী। তাদের মধ্যে সকলেই যে খুব কাজের লোক, তা নয়। দচারজন খেটেখুটে কাজ করে আর বাকি সবাই বসে বসে মাইনে খায়।
যারা ফাঁকি দিয়ে রোজগার করে, তাদের মধ্যে একজন আছেন, তিনি অসিলক্ষণ পণ্ডিত। তিনি রাজার কাছে এসে বললেন, তিনি অসিলক্ষণ (আর্থাৎ তলোয়ারের দোষ-গুণ) বিচার করতে জানেন। অমনি রাজা বললেন, “উত্তম কথা, আপনি আমার সভায় থাকুন, আমার রাজ্যের যত তলোয়ার আপনি তার লক্ষণ বিচার করবেন।
সেই অবধি ব্রাহ্মণ রাজার সভায় ভর্তি হয়েছেন, মোটারকম মাইনে পাচ্ছেন, আর প্রতিদিন তলোয়ার পরীক্ষা করছেন, আর বলছেন, “এই তলোয়ারটা ভালো, এই তলোয়ারটা খারাপ।ভারই কঠিন কাজ! কত তলোয়ার ঘেঁটে-ঘুঁটে, দেখে আর শুঁকে, চটপট তার বিচার করেন।
তাঁর বিচারের নিয়মটি কিন্তু ভারি সহজ! তলোয়ার এনে যখন তাঁর হাতে দেওয়া হয়, তখন তিনি সেটাকে শুঁকে দেখেন। তলোয়ার যারা বানায়, তারা তলোয়ারের গায়ে তাদের মার্কা এঁকে দেয়। তাই দেখে বোঝা যায় কোনটা কার তলোয়ার। পণ্ডিতমহাশয় শুঁকবার সময় সেই মার্কাটুকু দেখে নেন। যাদের উপর তিনি খুব খুশি থাকেন, যারা তাঁকে পয়সা-টয়সা দেয়, আর খাইয়ে-দাইয়ে তোয়াজ করে, তাদের তলোয়ার দেখলেই তিনি নেড়েচেড়ে টিপেটুপে বলেন, “খাসা তলোয়ার! দিব্যি তলোয়ার! হাজার টাকা দামের তলোয়ার!আর যাদের উপর তিনি চটা, যারা তাঁকে ঘুষও দেয় না, খাতিরও করে না, তাদের তলোয়ার যত ভালোই হোক না কেন, তাঁর কাছে পার পাবার যো নেই। সেগুলি জাতে পড়লেই তিনি অমনি একটু শুঁকেই নাক সিঁটকিয়ে বলে ওঠেন, “অতি বিচ্ছিরি! অতি বিচ্ছিরি! তলোয়ার তো নয়, যেন কাস্তে গড়েছে!
এমনি করে কত ভালো ভালো কারিকর, কত চমৎকার তলোয়ার বানিয়ে আনে, কিন্তু বিচারের গুণে তার দু-টাকাও দাম হয় না। এর মধ্যে একজন ওস্তাদ কারিকর আছে, সে বেচারা মনপ্রাণ দিয়ে একখানি তলোয়ার গড়ে, আর বিচারক মশাই, “দূর! দূর!রে সব বাতিল করে দেন। এই রকম হতে হতে শেষটা কারিকর গেল ক্ষেপে।
একদিন সে করল কি, একখানি তলোয়ার বানিয়ে, তার গায়ে বেশ করে লঙ্কার গুঁড়ো মাখিয়ে অসিলক্ষণ পণ্ডিতের কাছে এনে হাজির করল। পণ্ডিত নিতান্ত তাচ্ছিল্য করে, “আবার কী গরে আনলি?” বলে, যেমনি তাতে নাক ঠেকিয়ে শুঁকতে গেছেন, অমনি লঙ্কার গুঁড়ো নাকে ঢুকতেই হ্যাঁচ্‌ চো করে এক বিকট হাঁচি, আর সেই সঙ্গে তলোয়ারের আগায় ঘ্যাঁচ করে নাকে কেটে দুখান!
চারিদিকে হৈ চৈ পড়ে গেল, “জল আনরে,” “কবিরাজ ডাকরে,”— ততক্ষণে তলোয়ারওয়ালা লম্বা লম্বা পা ফেলে তার বাড়ি পর্যন্ত পিঠ্‌টান দিয়েছে।
অসিলক্ষণ পণ্ডিতের মহা মুশকিল। একে তো কাটা নাকের যন্ত্রণা, তার উপর সভায় বেরুলে সবাই ক্ষ্যাপায়, “নাক-কাটা পণ্ডিতলে। বেচারার এখন মুখ দেখানই দায়, সে সভায়ও যেতে পারে না, চাকরিও করতে পারে না। তাকে দেখলেই লোক জিজ্ঞাসা করে, “তঁ লোঁ য়াঁ র টাঁ কেঁমন ছিঁলঁ !
পণ্ডিত মশাই
পণ্ডিতমশাই, ভোলা আমায় ভ্যাংচাচ্ছে।
না পণ্ডিতমশাই, আমি কান চুলকাচ্ছিলাম, তাই মুখ বাঁকা দেখাচ্ছিল!
পণ্ডিতমশাই চোখ না খুলিয়াই অত্যন্ত নিশ্চিন্ত ভাবে বলিলেন, “আঃ! কেবল বাঁদরামি! দাঁড়িয়ে থাক।আধমিনিট পর্যন্ত সব চুপচাপ। তারপর আবার শোনা গেল, “দাঁড়াচ্ছিস না যে?”
আমি দাঁড়াব কেন?”
তোকেই তো দাঁড়াতে হবে।
যাঃ আমায় বলেছে না আর কিছু! গণশাকে জিগ্‌‌গেস কর? কিরে গণশা, ওকে দাঁড়াতে বলেছে না?” গণেশের বুদ্ধি কিছুটা মোটা, সে আস্তে আস্তে উঠিয়া গিয়া পণ্ডিতমশাইকে ডাকিতে লাগিল, “পণ্ডিতমশাই! ও পণ্ডিতমশাই!
পণ্ডিতমশাই বিরক্ত হ‌‌ইয়া বলিলেন, “কি বলছিস বল না।গণেশচন্দ্র অত্যন্ত ব্যাকুলভাবে জিজ্ঞাসা করিল, “কাকে দাঁড়াতে বলেছেন, পণ্ডিতমশাই?” পণ্ডিতমশাই কট্‌‌মটে চোখ মেলিয়াই সাংঘাতিক ধমক দিয়া বলিলেন, “তোকে বলেছি, দাঁড়া।বলিয়াই আবার চোখা বুজিলেন।
গণেশচন্দ্র দাঁড়াইয়া রহিল। আবার মিনিটখানেক সব চুপচাপ। হঠাৎ‌ ভোলা বলিল, “ওকে এক পায়ে দাঁড়াতে বলেছিল না ভাই?” গণেশ বলিল, “কক্ষনো না, খালি দাঁড়াতে বলেছে।বিশু বলিল, “এক আঙুল তুলে দেখিয়েছিল, তার মানেই এক পায়ে দাঁড়া।পণ্ডিতমশাই যে ধমক দিবার সময় তর্জনী তুলিয়াছিলেন, এ কথা গণেশ অস্বীকার করিতে পারিল না। বিশু আর ভোলা জেদ করিতে লাগিল, “শিগগির এক পায়ে দাঁড়া বলছি, তা না হলে এক্ষুণি বলে দিচ্ছি।
গণেশ বেচারা ভয়ে ভয়ে তাড়াতাড়ি এক পা তুলিয়া দাঁড়াইয়া রহিল। অমনি ভোলা আর বিশুর মধ্যে তুমুল তর্ক বাঁধিয়া গেল। এ বলে ডান পায়ে দাঁড়ানো উচিত, ও বলে, না, আগে বাঁ পা। গণেশ বেচারার মহা মুশকিল! সে আবার পণ্ডিতমশাইকে জিজ্ঞাসা করিতে গেল, “পণ্ডিতমশাই, কোন পা ?”
পণ্ডিতমশাই তখন কি যেন একটা স্বপ্ন দেখিয়া অবাক হ‌‌ইয়া নাক ডাকাইতেছিলেন। গণেশের ডাকে হঠাৎ‌ তন্দ্রা ছুটিয়া যাওয়ায় তিনি সাংঘাতিক রকম বিষম খাইয়া ফেলিলেন। গণেশ বেচারা তার প্রশ্নের এ রকম জবাব একেবারেই কল্পনা করে নাই, সে ভয় পাইয়া বলিল, “ঐ যা কি হবে?” ভোলা বলিল, “দৌড়ে জল নিয়ে আয়।বিশু বলিল, “শিগ্‌‌গির মাথায় জল দে।গণেশ এক দৌড়ে কোথা হ‌‌ইতে একটা কুঁজা আনিয়া ঢক্‌‌ঢক্‌‌ করিয়া পণ্ডিতমশায়ের টাকের উপর জল ঢালিতে লাগিল। পণ্ডিতমশায়ের বিষম খাওয়া খুব চট্‌‌পট্‌‌ থামিয়া গেল, কিন্তু তাঁহার মুখ দেখিয়া গণেশের হাতে জলের কুঁজা ঠক্‌‌ঠক্‌‌ করিয়া কাঁপিতে লাগিল।
ভয়ে সকলেই খুব গম্ভীর হ‌‌ইয়া রহিল, খালি শ্যামলাল বেচারার মুখটাই কেমন যেন আহ্লাদি গোছের হাসি হাসি মতো, সে কিছুতেই গম্ভীর হ‌‌ইতে পারিল না। পণ্ডিতমশায়ের রাগ হঠাৎ‌ তার উপরেই ঠিক্‌‌রাইয়া পড়িল। তিনি বাঘের মতো গুমগুমে গলায় বলিলেন, “উঠে আয়!শ্যামলাল ভয়ে কাঁদ কাঁদ হ‌‌ইয়া বলিল, “আমি কি করলাম? গণশা জল ঢাল্‌‌ল, তা আমার দোষ কি?” পণ্ডিতমশাই মানুষ ভালো, তিনি শ্যামলালকে ছাড়িয়া গণশার দিকে তাকাইয়া দেখেন তাহার হাতে তখনও জলের কুঁজা। গণেশ কোনো প্রশ্নের অপেক্ষা না করিয়াই বলিয়া ফেলিল, “ভোলা আমাকে বলেছিল।ভোলা বলিল, “আমি তো খালি জল আনতে বলেছিলম। বিশু বলেছিল, মাথায় ঢেলে দে।বিশু বলিল, “আমি কি পণ্ডিতমশায়ের মাথায় দিতে বলেছি? ওর নিজের মাথায় দেওয়া উচিত ছিল, তাহলে বুদ্ধিটা ঠাণ্ডা হত।
পণ্ডিতমশাই খানিকক্ষণ কটমট করিয়া সকলের দিকে তাকাইয়া তারপর বলিলেন, “যা! তোরা ছেলেমানুষ তাই কিছু বললাম না। খবরদার আর অমন করিসনে।সকলে হাঁফ ছাড়িয়া বাঁচিল, কিন্তু পণ্ডিতমশাই কেন যে হঠাৎ‌ নরম হ‌‌ইয়া গেলেন কেহ তাহা বুঝিল না। পণ্ডিতমশায়ের মনে হঠাৎ‌ যে তাঁর নিজের ছেলেবেলার কোন দুষ্টুমির কথা মনে পড়িয়া গেল, তাহা কেবল তিনি‌‌ই জানেন। 
আশ্চর্য কবিতা

চণ্ডীপুরের ইংরাজি স্কুলে আমাদের ক্লাশে একটি নূতন ছাত্র আসিয়াছে। তার বয়স বারো-চোদ্দোর বেশি নয়। সে স্কুলে আসিয়া প্রথম দিনই সকলকে জানাইল, “আমি পোইট্রি লিখতে পারি!এ কথা শুনিয়া ক্লাশসুদ্ধ সকলে অবাক হইয়া গেল; কেবল দু-একজন হিংসা করিয়া বলিল, “আমরাও ছেলেবেলায় ঢের ঢের কবিতা লিখেছি।নূতন ছাত্রটি বোধ হয় ভাবিয়াছিল, সে কবিতা লিখিতে পারে, শুনিয়া ক্লাশে খুব হুলুস্থল পড়িয়া যাইবে, এবং কবিতার নমুনা শুনিবার জন্য সকলে হাঁ হাঁ করিয়া উঠিবে। যখন সেরূপ কিছুরই লক্ষণ দেখা গেল না, তখন বেচারা, যেন আপন মনে কি কথা বলিতেছে, এরূপভাবে, যাত্রার মত সুর করিয়া একটা কবিতা আওড়াইতে লাগিল-
ওহে বিহঙ্গম তুমি কিসের আশায়
বসিয়াছ উচ্চ ডালে সুন্দর বাসায়?
নীল নভোমণ্ডলেতে উড়িয়া উড়িয়া
কত সুখ পাও, আহা ঘুরিয়া ঘুরিয়া!
যদ্যপি থাকিত মম পুচ্ছ এবং ডানা
উড়ে যেতাম তব সনে নাহি শুনে মানা-
কবিতা শেষ হইতে না হইতেই ভবেশ অদ্ভুত সুর করিয়া এবং মুখভঙ্গি করিয়া বলিল-
আহা যদি থাকত তোমার ল্যাজ এবং ডানা
উড়ে গেলেই আপদ যেত- করত না কেউ মানা!
শুনিয়া সকলে হো হো করিয়া হাসিয়া উঠিল।
নূতন ছাত্র তাহাতে রাগিয়া বলিল, “দেখ বাপু, নিজেরা যা পার না, তা ঠাট্টা করে উড়িয়ে দেওয়া ভারি সহজ। শৃগাল ও দ্রাক্ষাফলের গল্প শোন নি বুঝি?” একজন ছেলে অত্যন্ত ভালোমানুষের মতো মুখ করিয়া বলিল, “শৃগাল অবং দ্রাক্ষাফল! সে আবার কি গল্প?” অমনি নূতন ছাত্রটি আবার সুর ধরিল-
বৃক্ষ হতে দ্রাক্ষাফল ভক্ষণ করিতে
লোভী শৃগাল প্রবেশ করে দ্রাক্ষাক্ষেতে
কিন্তু হায় দ্রাক্ষা যে অত্যন্ত উচ্চে থাকে
শৃগাল নাগাল পাবে কিরূপে তাহাকে?
বারম্বার চেষ্টায় হয়ে অকৃতকার্য
দ্রাক্ষা টকবলিয়া পালাল ছেড়ে (সেই) রাজ্য-
সেই হইতে আমাদের হরেরাম একেবারে তাহার চেলা হইয়া গেল। হরেরামের কাছে আমরা শুনিলাম যে ছোকরার নাম শ্যামলাল। সে নাকি এত কবিতা লিখিয়াছে যে একখানা দুপয়সার খাতা প্রায় ভর্তি হইয়াছে- আর আট-দশটি কবিতা হইলেই তাহার একশোটা পুরা হয়, তখন সে নাকি বই ছাপাইবে। শুনিয়া কেহ কেহ আরো অবাক হইয়া গেল- কাহারো কাহারো হিংসা আরো দ্বিগুণ জ্বলিয়া উঠিল।
ইহার মধ্যে একদিন এক কাণ্ড হইল। গোপাল বলে একটি ছেলে স্কুল ছাড়িয়া যাইবে, এই উপলক্ষে শ্যামলাল এক প্রকাণ্ড কবিতা লিখিয়া ফেলিল! তাহার মধ্যেবিদায় বিদায়বলিয়া অনেক অশ্রুজল’ ‘দুঃখশোকইত্যাদি কথা ছিল। গোপাল কবিতার আধখানা শুনিয়াই একেবারে তেলেবেগুনে জ্বলিয়া উঠিল। সে বলিল, “হতভাগা, ফের আমার নামে পোইট্রি লিখবি তো এক থাপ্পড় মারব। কেন রে বাপু দুনিয়ায় কি কবিতা লিখবার আর কোনো জিনিস পাও নি?” হরেরাম বলিল, “আহা, বুঝলে না? তুমি ইস্কুল ছেড়ে যাচ্ছ কিনা, তাই ও লিখেছে।গোপাল বলিল, “ছেড়ে যাচ্ছি তো যাচ্ছি, তোর তাতে কি রে? ফের জ্যাঠামি করবি তো তোর কবিতার খাতা ছিঁড়ে দেব।দেখিতে দেখিতে স্কুলময় রাষ্ট্র হয়ে পড়িল। ছেলেরা, বিশেষত নিচের ক্লাশের ছেলেরা, দলে দলে শ্যামলালের কবিতা শুনিতে আসিতে লাগিল! ক্রমে কবিত লেখার বাতিকটা ভয়ানক রকমের ছোঁয়াচে হইয়া স্কুলের প্রায় অর্ধেক ছেলেকে পাইয়া বসিল। ছোটো-ছোটো ছেলেদের পকেটে ছোটো-ছোটো কবিতার খাতা দেখা দিল- বড়োদের মধ্যে কেহ কেহ শ্যামলালের চেয়ে ভালো কবিতালিখিবার জন্য কোমর বাঁধিয়া লাগিয়া গেল! স্কুলের দেয়ালে, পড়ার কেতাবে, পরীক্ষার খাতায়, চারিদিকে কবিতা গজাইয়া উঠিল।
পাঁড়েজির বৃদ্ধ ছাগল যেদিন শিং নাড়িয়া দড়ি ছিঁড়িয়া স্কুলের উঠানে দাপাদাপি করিয়াছিল, আর শ্যামলালকে তাড়া করিয়া খানায় ফেলিয়াছিল, তাহার পরদিন ভারতবর্ষের বড়ো ম্যাপের উপর বড়ো-বড়ো অক্ষরে লেখা বাহির হইল-
পাঁড়েজির ছাগলের একহাত দাড়ি,
অপরূপ রূপ তার যাই বলিহারি!
উঠানে দাপট করি নেচেছিল কাল-
তার পর কি হইল জানে শ্যামলাল।
শ্যামলালের রঙটি কালো, কিন্তু কবিতা পড়িয়া সে যথার্থই চটিয়া লাল হইল, এবং তখনই তাহার নীচে একটা কড়া জবাব লিখিতে লাগিল। সে সবেমাত্র লিখিয়াছে, ‘রে অধম দুরাচার, পাষণ্ড বর্বর!এমন সময় গুরুগম্ভীর গলায় কে যেন ডাকিল, “শ্যামলাল!ফিরিয়া দেখি হেডমাস্টার মহাশয়! ম্যাপের ওপর কি লেখা হচ্ছে?” শ্যামলাল একেবারে থতমত খাইয়া বলিল, “আজ্ঞে, আমি আগে লিখি নি, আগে ওরা লিখেছিল।” “ওরা কারা?” শ্যামলাল বোকার মত একবার আমাদের দিকে একবার কড়িকাঠের দিকে তাকাইতে লাগিল, কাহার নাম করিবে বুঝিতে পারিল না। মাস্টার- মহাশয় আবার বলিলেন, “ওরা যদি পরের বাড়ী সিঁদ কাটতে যায়, তুমিও কাটবে? ওরা যদি নিজের গলায় ছুরি বসায়, দেখাদেখি তুমিও বসাবে?” যাহা হউক, সেদিন অল্পের উপর দিয়াই গেল, শ্যামলাল একটু ধমক-ধামক খাইয়াই খালাস পাইল।
ইহার মধ্যে আমাদের নূতন শিক্ষকমহাশয় গল্প করিলেন যে তাহার সঙ্গে যাহারা এক ক্লাশে পড়িত, তাহাদের মধ্যে একজন নাকি অতি সুন্দর কবিতা লিখিত। একবার ইনস্পেকটার স্কুল দেখিতে আসিয়া তাহার কবিতা শুনিয়া তাহাকে সুন্দর ছবিওয়ালা বই উপহার দিয়েছিলেন। এই গল্পটি মনে হয় অনেকেরই মনে লাগিয়াছিল! বোধ হয় অনেকেই মনে মনে স্থির করিয়াছিল, ‘ইনস্পেকটার আসিলে তাহাকে কবিতা শুনাইতে হইবে।
ইহার মাসখানেক পরেই ইনস্পেকটার স্কুল দেখিতে আসিলেন। প্রায় পঁচিশ-ত্রিশটি ছেলে সাবধানে পকেটের মধ্যে লুকাইয়া কবিতার কাগজ আনিয়াছে- বড়ো হলের মধ্যে সমস্ত স্কুলর ছেলেদের দাঁড় করানো হইয়াছে- হেডমাস্টার মহাশয় ইনস্পেকটারকে লইয়া ঘরে ধুকিতেছেন, এমন সময় শ্যামলাল আস্তে-আস্তে পকেট হইতে একটি কাগজ বাহির করিল। আর কোথা যায়! পাছে, শ্যামলাল আগেই তাহার কবিতা পড়িয়া ফেলে, এই ভয়ে ছোটো-বড়ো পঁচিশ-ত্রিশটি কবিতাওয়ালা একসঙ্গে সাংঘাতিক রকম বিকট চিত্কার করিয়া যে যার কবিতা হাঁকিয়া উঠিল। মনে হইল, সমস্ত বাড়িটা করতালের মতো ঝন্ ঝন্ করিয়া বাজিয়া উঠিল- ইনস্পেকটার মহাশয় মাথা ঘুরিয়া মাঝপথেই মেঝের উপর বসিয়া পড়িলেন- ছাদের উপর একটা বেড়াল ঘুমাইতেছিল সেটা হঠাত্‍‌ হাত-পা ছুঁড়িয়া তিনতলা হইতে পড়িয়া গেল- স্কুলের দরোয়ান হইতে অফিসের কেশিয়ার বাবু পর্যন্ত হাঁ হাঁ করিয়া ছুটিয়া আসিল!
সকলে সুস্থ হইলে পর মাস্টারমহাশয় বলিলেন, “এত চেঁচাইলে কেন?” সকলে চুপ করিয়া রহিল। আবার জিজ্ঞাসা হইল। কে কে চেঁচাইয়াছিলে?” পাঁচ-সাতটি ছেলে একসঙ্গে বলিয়া উঠিল, “শ্যামলাল।শ্যামলাল যে একা অত মারাত্মক রকম চেঁচাইতে পারে এ কথা কেহই বিশ্বাস করিল না- সুতরাং স্কুলসুদ্ধ ছেলেকে সেদিন স্কুলের পর আটকাইয়া রাখা হইল!
অনেক তম্বিতাম্বার পর একে একে সমস্ত কথা বাহির হইয়া পড়িল। হেডমাস্টার মহাশয় বলিলেন, “কবিতা লেখার রোগ হয়েছে? ও রোগের ওষুধ কি?” বৃদ্ধ পণ্ডিতমহাশয় বলিলেন, “বিষস্য বিষমৌষধম্- বিষের ওষুধ বিষ। বসন্তের ওষুধ যেমন বসন্তের টিকা, কবিতার ওষুধ তস্য টিকা। তোমরা যে যা কবিতা লিখেছ তার টিকা করে দিচ্ছি। তোমরা একমাস প্রতিদিন পঞ্চাশবার করে এটা লিখে এনে রোজ আমায় দেখাবে।এই বলে তিনি টিকা দিলেন-
পদে পদে মিল খুঁজি, গুনে দেখি চোদ্দো
মনে করি লিখিতেছি ভয়ানক পদ্য!
হয় হব ভবভূতি নয় কালিদাস
কবিতার ঘাস খেয়ে চরি বারোমাস।
একমাস তিনি আমাদের কাছে এই লেখা প্রতিদিন পঞ্চাশবার আদায় না করিয়া ছাড়িলেন না। এ কবিতার কি আশ্চর্য গুণ তার পর হইতে কবিতা লেখার ফ্যাশান স্কুল হইতে একেবারেই উঠিয়া গেল।

পেটুক
হরিপদ! ও হরিপদ!
হরিপদর আর সাড়াই নেই! সবাই মিলে এত চ্যাঁচাচ্ছে, হরিপদ আর সাড়াই দেয় না। কেন, হরিপদ কালা নাকি? কানে কম শোনে বুঝি? না, কম শুনবে কেন- বেশ দিব্যি পরিষ্কার শুনতে পায়। তবে হরিপদ কি বাড়ি নেই? তা কেন? হরিপদর মুখ ভরা ক্ষীরের লাডু, ফেলতেও পারে না, গিলতেও পারে না। কথা বলবে কি করে? আবার ডাক শুনে ছুটে আসতেও পারে না- তাহলে যে ধরা পড়ে যাবে। তাই সে তাড়াতাড়ি লাড়ু গিলছে আর জল খাচ্ছে, আর যতই গিলতে চাচ্ছে ততই গলার মধ্যে লাড়ুগুলো আঠার মতো আটকে যাচ্ছে। বিষম খাবার যোগাড় আর কি!
এটা কিন্তু হরিপদর ভারি বদভ্যাস। এর জন্য কত ধমক, কত শাসন, কত শাস্তি, কত সাজাই যে সে পেয়েছে,ও তবু তার আক্কেল হল না। তবু সে লুকিয়ে চুরিয়ে পেটুকের মতো খাবেই। যেমন হরিপদ তেমনি তার ছোট ভাইটি। এদিকে পেট রোগা, দুদিন অন্তর অসুখ লেগেই আছে, তবু হ্যাংলামি তাদের আর যায় না। যেদিন শাস্তিটা একটু শক্ত রকমের হয় তারপর কয়েক দিন ধরে প্রতিজ্ঞা থাকে,এমন কাজ আর করব না। যখন অসময়ে অখাদ্য খেয়ে, রাত্রে তার পেট কামড়ায়, তখন কাঁদে আর বলে, “আর না, এইবারেই শেষ। কিন্তু দুদিন না যেতেই আবার যেই সেই।
এই তো কিছুদিন আগে পিসিমার ঘরে দই খেতে গিয়ে তারা জব্দ হয়েছিল, কিন্তু তবু লজ্জা নেই। হরিপদর ছোট ভাই শ্যামাপদ এসে বলল, “দাদা, শিগগির এস। পিসিমা এই মাত্র এক হাঁড়ি দই নিয়ে তার খাটের তলায় লুকিয়ে রাখলেন।দাদাকে এত ব্যস্ত হয়ে এ-খবরটা দেবার আর্থ এই যে, পিসিমার ঘরে বিশাল শিকল দেওয়া থাকে, শ্যামাপদ সেটা হাতে নাগাল পায় না- তাই দাদার সাহায্য দরকার হয়। দাদা এসে আস্তে আস্তে শিকলটা খুলে আগেই তারাতাড়ি গিয়ে খাটের তলায় দইয়ের হাঁড়ি থেকে এক খাবল তুলে নইয়ে খপ করে মুখে দিয়েছে। মুখে দিয়েই চীৎকার। কথায় বলে, “ষাঁড়ের মত চ্যাঁচাচ্ছে”, কিন্তু হরিপদর চেঁচানো তার চাইতেও সাংঘাতিক! চীৎকার শুনে মা-মাসি-দিদি-পিসি যে যেখানে ছিলেন সব কি হল, কি হলবলে দৌড়ে এলেন। শ্যামাপদ বুদ্ধিমান ছেলে, সে দাদার চীৎকারের নমুনা শুনেই দৌড়ে ঘোষেদের পাড়ায় গিয়ে হাজির! সেখানে অত্যন্ত ভালোমানুষের মতো তার বন্ধু শান্তি ঘোষের কাছে পড়া বুঝে নিচ্ছে। এদিকে হরিপদর অবস্থা দেখে পিসিমা বুঝেছেন যে,হরিপদ দি ভেবে তাঁর চুনের হাঁড়ি চেখে বসেছে। তারপর হরিপদর যা সাজা! এক সপ্তাহ ধরে সে না পারে চিবোতে, না পারে গিলতে, তার খাওয়া নিয়েই এক মহা হাঙ্গামা! কিন্তু তবু তার লজ্জা নেই! আজ আবার লুকিয়ে কোথায় লাড়ু খেতে গিয়েছে। ওদিকে মামা তো ডেকে সারা!
খানিক বাদে মুখ ধুয়ে মুছে হরিপদ ভালোমানুষের মতো এসে হাজির। হরিপদর বড়মামা বললেন, “কিরে, এতক্ষণ কোথায় ছিলি?” হরিপদ বলল, “এইতো, উপরে ছিলাম।” “তবে, আমরা এত চ্যাঁচাচ্ছিলাম, তুই জবাব দিচ্ছিলি না যে?” হরিপদ মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল, “আজ্ঞে জল খাচ্ছিলাম কিনা।” “শুধু জল?” না, কিছু স্থলও ছিল?” হরিপদ শুনে হাসতে লাগল যেন তার সঙ্গে ভারই একটা রসিকতা করা হয়েছে। এর মধ্যে তার মেজমামা মুখখানা গম্ভীর করে এসে হাজির। তিনি ভিতর থেকে খবর এনেছেন যে, হরিপদ একটু আগেই ভাঁড়ারঘরে ঢুকেছিল, আর তারপর থেকেই দশ-বারোখানা ক্ষীরের লাড়ু কম পড়েছে। তিনি এসেই হরিপদর বড়মামার সঙ্গে খানিকক্ষণ ইংরাজিতে ফিসফিস কি যেন বলাবলি করলেন, তারপর গম্ভীরভাবে বললেন, “বাড়িতে ইঁদুরের যে রকম উৎপাত, ইঁদুর মারবার একটা কিছু বন্দোবস্ত না করলে আর চলছে না। চারদিকে যে রকম প্লেগ আর ব্যরাম! এই পাড়া সুদ্ধু ইঁদুর না মারলে আর রক্ষা নেই।বড়মামা বললেন, “হ্যাঁ, তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দিদিকে বলেছি, সেঁকো বিষ দইয়ে লাড়ু পাকাবে- সেইগুলো একবার ছড়িয়ে দিলেই ইঁদুর বংশ নির্বংশ হবে।
হরিপদ জিজ্ঞেস করল, “লাড়ু কবে পাকানো হবে?” বড়মামা বললেন, “সে এতক্ষণে হয়ে গেছে, সকালেই টেঁপিকে দেখছিলাম একথাল ক্ষীর নিয়ে দিদির সঙ্গে লাড়ু পাকাতে বসেছে।হরিপদর মুখখানা আমসির মতো শুকিয়ে এল, সে খানিকটা ঢেঁকি গিলে বলল, “সেঁকো বিষ খেলে কি হয় বড়মামা?” “হবে আবার কি? ইঁদুরগুলো মারা পড়ে, এই হয়।” “আর যদি মানুষে এই লাড়ু খেয়ে ফেলে?” “তা একটু আধটু যদি খেয়ে ফেলে তো নাও মরতে পারে- গলা জ্বলবে, মাথা ঘুরবে, বমি হবে, হয়তো হাত-পা খিঁচবে।” “আর যদি একেবারে এগারোটা লাড়ু খেয়ে ফেলে?” বলে হরিপদ ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেলল। তখন বড়মামা হাসি চেপে অত্যন্ত গম্ভীর হয়ে বললেন, “বলিস কিরে? তুই খেয়েছিস নাকি?” হরিপদ কাঁদতে কাঁদতে বলল, “হ্যাঁ বড়মামা, তার মধ্যে পাঁচটা খুব বড় ছিল। তুমি শিগগির ডাক্তার ডাক বড়মামা, আমার কি রকম গা ঝিম্‌ঝিম্‌ আর বমি বমি করছে।”  

সবজান্তা দাদা

এই দ্যাখ্‌‌ টেঁপি, দ্যাখ্‌‌ কি রকম করে হাউই ছাড়তে হয়। বড় যে রাজুমামাকে ডাকতে চাচ্ছিলি? কেন, রাজুমামা না হলে বুঝি হাউই ছোটানো যায় না? এই দ্যাখ্‌‌।
দাদার বয়স প্রায় বছর দশেক হবে, টেঁপির বয়স মোটে আট, অন্য অন্য ভাইবোনেরা আরো ছোট। সুতরাং দাদার দাদাগিরির অন্ত নেই। দাদাকে হাউই ছাড়তে দেখে টেঁপির বেশ একটু ভয় হয়েছিল, পাছে দাদা হাউইয়ের তেজে উড়ে যায়, কি পুড়ে যায়, কিম্বা সাংঘাতিক একটা কিছু ঘটে যায়। কিন্তু দাদার ভরসা দেখে তারও একটু ভরসা হল।
দাদা হাউইটিকে হাতে নিয়ে, একটুখানি বাঁকিয়ে ধরে বিজ্ঞের মতো বলতে লাগল, “এই সল্‌‌তের মতো দেখছিস্‌‌ এইখানে আগুন ধরাতে হয়। সল্‌‌তেটা জ্বলতে জ্বলতে যেই হাউই ভস্‌‌ করে ওঠে অমনি ঠিক সময়টি বুঝেএই এম্নি করে হাউইটিকে ছেড়ে দিতে হয়। এইখানেই হচ্ছে আসল বাহাদুরি। কাল দেখলি তো, প্রকাশটা কি রকম আনাড়ীর মতো করেছিল। হাউই জ্বলতে না জ্বলতে ফস করে ছেড়ে দিচ্ছিল। সেইজন্য‌‌ই হাউইগুলো আকাশের দিকে না উঠে নিচু হতে এদিক ওদিক বেঁকে যাচ্ছিল।
ফ্যাঁসফোঁস্‌‌ছররর! এত শিগ্‌‌গির হাউইয়ে আগুন ধরে যায় সেটা দাদার খেয়ালেই ছিল না, দাদা তখনো ঘাড় বাঁকিয়ে হাসি হাসি মুখ করে নিজের বাহাদুরির কথা ভাবছেন। কিন্তু হাসিটি না ফুরাতেই হাউই যখন ফ্যাঁস্‌‌ করে উঠল তখন সেই সঙ্গে দাদার মুখ থেকেও হাঁউ-মাউ গোছের একটা বিকট শব্দ আপনা থেকেই বেরিয়ে এল। আর তার পরেই দাদা যে একটা লম্ফ দিলেন, তার ফলে দেখা গেল মাঝখানে চিৎ‌পাত হয়ে অত্যন্ত আনাড়ীর মতো তিনি হাত পা ছুঁড়ছেন। কিন্তু তা দেখবার অবসর টেঁপিদের হয়নি। কারণ দাদার চিৎ‌কার আর লম্ফভঙ্গীর সঙ্গে সঙ্গে তারাও কান্নার সুর চড়িয়ে বাড়ির ভিতরদিকে রওনা হয়েছিল।
কান্না-টান্না থামলে পর রাজুমামা যখন দাদার কান ধরে তাকে ভিতরে নিয়ে এলেন, তখন দেখা গেল যে, দাদার হাতের কাছে ফোস্‌‌কা পড়ে গেছে আর গায়ের দু-তিন জায়গায় পোড়ার দাগ লেগেছে। কিন্তু তার জন্য দাদার দুঃখ নেই, তার আসল দুঃখ এই যে টেঁপির কাছে তার বিদ্যেটা এমন ভাবে ফাঁস হয়ে গেল। রাজুমামা চলে যেতেই সে হাতে মলম মাখতে মাখতে বলতে লাগল, কোথাকার কোন দোকান থেকে হাউই কিনে এনেছেভালো কতে মশলা মেশাতেও জানে না। বিষ্টু পাঠকের দোকান থেকে হাউই আনলেই হত। বার বার বলেছিরাজু মামা হাউই চেনে না, তবু তাকেই দেবে হাউই কিনতে।
তারপর সে টেঁপিকে আর ভোলা, ময়না আর খুক্‌‌নুকে বেশ করে বুঝিয়ে দিল যে, সে যে চেঁচিয়েছিল আর লাফ দিয়েছিল, সেটা ভয়ে নয়, হঠাৎ‌ ফুর্তির চোটে।


Banner